টিকিট কেটেও সৌদি যেতে পারেননি হাজারো প্রবাসী

করোনা পরিস্থিতিতে সৌদি সরকারের আরোপ করা কঠোর বিধি-নিষেধের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সৌদিগামী অভিবাসী বাংলাদেশিরা। এসব শর্তের কারণে টিকিট কেটেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যেতে পারেননি এক হাজারের বেশি প্রবাসী কর্মী। সৌদি আরবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং না থাকায় গত দুই দিনে ফ্লাইট ধরতে পারেননি সৌদিগামী এসব অভিবাসী শ্রমিক। এমন পরিস্থিতিতে সৌদিগামী বাংলাদেশিদের কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে হোটেলভাড়া বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

নানা শর্তের কারণে পাঁচ দিন ধরে বন্ধ ছিল সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শর্ত শিথিলের দেনদরবারে কোনো লাভ হয়নি। সৌদি আরবের দেওয়া শর্তের মধ্যে রয়েছে নগদ প্রায় ৬৫ হাজার টাকায় বাধ্যতামূলক হোটেল বুকিং দিয়ে সেখানে গিয়ে সাত দিনের কোয়ারেন্টিন, দেশটিতে গিয়ে দুই দফা ছয় হাজার টাকা খরচ করে করোনাভাইরাসের টেস্ট, বাধ্যতামূলক মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স, ইচ্ছাকৃত বা দুর্ঘটনাবশত করোনা ছড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে পাঁচ লাখ রিয়াল বা সোয়া কোটি টাকা জরিমানা, পাঁচ বছরের জেল, সৌদি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শর্ত। প্রবাসীরা বলছেন, এসব শর্ত মেনে অনেক প্রবাসীর পক্ষে সৌদি যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে।

গত রাতে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল ভুক্তভোগী যাত্রী নোয়াখালীর তাজুল ইসলামের। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু হোটেল নিশ্চিত করতে পারিনি, তাই ফ্লাইট ধরতে পারিনি। ফ্লাইটের আগের দিন সৌদি এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা প্রথমে বলেছিলেন, হোটেল বুকিংয়ের জন্য ৬০ হাজার টাকা আনতে। কারওয়ান বাজারে এয়ারলাইনসের অফিসে আসার পর তাঁরা বলছেন, সৌদি আরবে কফিল বা ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে হোটেল বুকিং দিতে। যখন সৌদি আরবে যোগাযোগ করলাম তখন আমার ট্রাভেল এজেন্ট বললেন, বাংলাদেশ থেকে হোটেল বুকিং করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হোটেল বুকিং দেওয়ার বিষয়ে সঠিক তথ্য কারওয়ান বাজারে সৌদি এয়ারলাইনসের অফিস বা শাহজালাল বিমানবন্দরের কারো কাছে পাচ্ছি না।’

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, হোটেল বুকিং না থাকায় গত দুই দিনে এক হাজারের বেশি সৌদি অভিবাসী শ্রমিক ফ্লাইট মিস করেছেন। এ বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা মুখ খুলছেন না।

এদিকে সৌদি আরব গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে হোটেলভাড়া সরকার পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সৌদি আরবে যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। কারণ ওই দেশ

নিয়ম করেছে, যাঁরা সেখানে যাবেন তাঁদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। আমাদের দেশ থেকে যাওয়া প্রবাসীদের কষ্ট দেখে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের হোটেলে থাকার খরচ যেন সরকার বহন করে।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘যেসব প্রবাসী সেখানে যাবেন, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করে সৌদি আরবে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া হবে। তিনি সেখানে তাঁদের থাকার ব্যবস্থার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।’

এদিকে কয়েক দিন ধরেই ভোগান্তি আর হতাশা নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সৌদিয়া এয়ারলাইনস কার্যালয়ে ধরনা দিলেও অনিশ্চিত সৌদি যাত্রা। এতে ভারী ভারী ব্যাগ, লাগেজ নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শত শত সৌদিপ্রবাসী ও সঙ্গে থাকা স্বজনরা।

করোনা সংক্রমণ রোধে সৌদি সরকারের নতুন নির্দেশনায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আসা প্রবাসীরাও। গতকাল জেদ্দা ফ্লাইট ধরতে হোটেল বুকিংয়ের জন্য বিমানবন্দরে গিয়ে যাত্রীরা জানতে পারেন, সার্ভার ডাউন থাকায় বুকিং কার্যক্রম বন্ধ। যাত্রা অনিশ্চিত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভিসা ও আকামার মেয়াদ ফুরিয়ে আসা যাত্রীরা।

জানতে চাইলে বায়রার ‘সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট’র মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ বলেন, এই মুহূর্তে অতিরিক্ত ৬০ হাজার টাকা, এই খরচটা যেহেতু শ্রমিকদের টাকা থেকে কল্যাণ ফান্ড হিসেবে গড়ে উঠেছে, প্রত্যেক শ্রমিক বিদেশ যাওয়ার সময় আমরা একটা টাকা কল্যাণ তহবিলে জমা দেই। সেই ফান্ডে শত শত কোটি টাকা জমা আছে। শ্রমিকদের ফান্ড শ্রমিকদের জন্য ব্যয় করতে আমরা সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি।’

সূত্র: কালের কন্ঠ